নিজস্ব প্রতিবেদন
ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াই, শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণে ২৫০ কোটি টাকার সহায়তা—নতুন রাষ্ট্র গঠনের শপথ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে একটি ভিডিওবার্তায় জাতির উদ্দেশে গভীর আবেগ ও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত এই বার্তায় তিনি ৫ আগস্টকে শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়, বরং গণজাগরণের প্রতীক ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা কেবল অতীত স্মরণ করতে আসিনি—আমরা একটি শপথ গ্রহণ করতে এসেছি। শপথ এই যে—আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না, আমরা প্রতিষ্ঠা করব একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ সালে যেভাবে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল শোষণের বিরুদ্ধে, তেমনি ২০২৪ সালের উত্তাল জুলাইয়ে দেশের ছাত্র, তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ জনগণ অন্যায়, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। দীর্ঘ ১৬ বছরের বঞ্চনা, চাকরিতে দুর্নীতি, কোটা বৈষম্য, এবং দলীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
ড. ইউনুস বলেন, এই দেড় যুগে সরকারি চাকরিতে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিমূলক কোটা পদ্ধতি, এবং মাফিয়াতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। ফ্যাসিবাদী সরকার জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জবাবে গুলি চালিয়েছে, আহতদের হাসপাতালে ভর্তি না করার নির্দেশ দিয়েছে। এসব ঘৃণ্য ঘটনা জাতি আজও ভুলতে পারেনি।
প্রধান উপদেষ্টা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জুলাইয়ের শহীদদের, আহত ও পঙ্গু হয়ে যাওয়া হাজারো মানুষকে। তিনি বলেন, জাতির পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি চিরন্তন কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান:
৭৭৫টি শহীদ পরিবারকে ইতোমধ্যে ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতার চেক দেওয়া হয়েছে।
জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে আহত ১৩,৮০০ জনকে মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
৭৮ জনকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় পাঠিয়ে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে আহতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসার নির্দেশনা জারি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই দেশের গরিব-মেহনতি মানুষের পয়সা লুট করে যারা টাকার পাহাড় গড়েছে, তাদের বিচার একদিন হবেই। জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ তখনই স্বার্থক হবে যখন আমরা একটি প্রকৃত জনকল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারব।
বার্তার শেষাংশে তিনি মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই শহীদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের পথচলার প্রেরণা। তাঁদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
সূত্র: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অফিসিয়াল ফেসবুক বার্তা