মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ও সিলেট অঞ্চলের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে ইউরোপগামীদের গেমের দাম।
লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইউরোপ, বিশেষ করে ইতালিতে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখছে হাজারো বাংলাদেশি তরুণ। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণের পথ এখন আর সস্তা নয়—বরং ভয়াবহ রকম ব্যয়বহুল ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। যেখানে আগে একটি ‘গেম’ বা সমুদ্রপথে ইউরোপ পৌঁছানোর চুক্তি ১২-১৩ লাখ টাকায় সম্পন্ন হতো, এখন তা বাড়তে বাড়তে ১৮ থেকে ২২ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
বিশেষ করে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ও সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, এবং মৌলভীবাজার এলাকার কিছু দালাল বা মধ্যসত্বভোগীদের কারণেই এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গেমের মূল সংগঠকরা যেখানে তুলনামূলক কম টাকায় চুক্তি করে থাকে, সেখানে বাংলাদেশে সক্রিয় কয়েক স্তরের দালাল চক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
একেকজনের পেছনে ৪-৫ জন দালাল, সবাই নিচ্ছে ভাগ
একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী যুবকের ইউরোপ যাওয়ার পেছনে অন্তত ৪ থেকে ৫ জন মধ্যস্বত্বভোগী যুক্ত থাকে—বাংলাদেশে দালাল, দুবাই বা ওমানে ট্রানজিট দালাল, লিবিয়ায় লোকাল হ্যান্ডেলার, গেম ছাড়ার লোক, এমনকি কেউ কেউ কোস্টগার্ড বা মিলিশিয়াদের ‘ম্যানেজমেন্ট ফি’ নামেও টাকা আদায় করে।
প্রত্যেকেই ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাগ নেয়, ফলে সুমার করে একেকজনের যাত্রা ব্যয় ২০ লাখ ছুঁই ছুঁই। অথচ যারা সরাসরি গেম ছাড়ে বা মূল দল নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের নেওয়া পারিশ্রমিক তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
‘শুভ’ দালালের ছায়ায় চলছে নিষ্ঠুর বাণিজ্য
এই চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করেন না কেউই। কারণ, অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রবাসী সিন্ডিকেট বা ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদেই এসব দালালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তদুপরি, যারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারা ভয় বা আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শে চুপ থাকেন।
বাঁচার স্বপ্নেই ঝুঁকি নেয় মানুষ, মরে যায় পথে
ভয়ংকর বিষয় হলো, এত বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেও গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই। লিবিয়ার মরুভূমি, বন্দিশিবির, অতিরিক্ত গরম, খাবারের অভাব, নির্যাতন, এমনকি ভূমধ্যসাগরের উত্তাল ঢেউ—সবকিছু পরোয়া করে না