ত্রিপলি, লিবিয়া | ৬ আগস্ট ২০২৫
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে রহিমকে। মাদারীপুর জেলার কালিকাপুর গ্রামের এই কিশোরের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন একসময় রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে।
২০২৪ সালের ৩ মার্চ, তিনি রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি এলাকা থেকে রওনা দেন। উদ্দেশ্য ছিল উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ যাত্রা। কিন্তু সেই যাত্রা ছিল বাংলাদেশি দালাল চক্রের মাধ্যমে একটি ভয়ঙ্কর মানবপাচারের পরিকল্পনার অংশ।
আমরা বাংলাদেশি মাফিয়াদের জন্য কাজ করা লোকদের হাতে পড়েছিলাম,” বলেন রহিম।
প্রথমে তাকে ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও কিছু বাংলাদেশি অভিবাসীর সঙ্গে তাকে কয়েকদিন আটকে রাখা হয়। এরপর শুরু হয় লিবিয়ার পথে বিপজ্জনক যাত্রা।
বেশিরভাগ অভিবাসী লিবিয়ায় পৌঁছানোর আগে দুই থেকে চার দিন মিশরে অবস্থান করে,” ব্যাখ্যা করেন রহিম।
ইউরোপীয় সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স-এর গবেষণাও রহিমের বক্তব্যকে সমর্থন করে। সংস্থাটি জানায়, ঢাকা ও লিবিয়ার মধ্যে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য একটি সাধারণ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে।
রহিম জানান, প্রথমে তাদের রাখা হয় লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে একটি বাড়িতে। কিছুদিন পর শরিফ নামে এক ব্যক্তি—যাকে রহিম আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী হিসেবে বর্ণনা করেন—তাদের সাবরাথা নামক শহরে পাঠিয়ে দেয়।
“শরিফ আমাদের বাংলাদেশি মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ওদের মতে, ইতালিতে পৌঁছানোর এটাই ছিল একমাত্র উপায়,” বলেন রহিম।
রহিম এবং তার সঙ্গীরা মোট ১৪টি মাস লিবিয়ায় অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে কাটিয়েছেন বলে জানান। তার বয়স এখনো ১৮ হয়নি। নিরাপত্তার স্বার্থে তার মুখমণ্ডল গোপন রাখতে ছবিতে পিক্সেল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ঘটনা লিবিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসনপথে মানবপাচারের ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি রহিমের মতো শত শত তরুণের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন মানবাধিকারকর্মীরা।