মাদক সেবনে মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকেই ভয়াবহ ক্ষতি হয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত মাদক গ্রহণে মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস হতে শুরু করে, শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, লিভারের সমস্যা ও মানসিক বিকার দেখা দিতে পারে। আসক্তি যত গভীর হয়, ততই স্বাভাবিক জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, মাদক কেবল ব্যক্তিকেই নয়, তার পরিবার ও সমাজকেও বিপর্যস্ত করে তোলে। মাদকাসক্তদের মধ্যে হতাশা, অবসাদ, আত্মহত্যাপ্রবণতা এবং অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। একবার আসক্ত হয়ে পড়লে তা থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন, ফলে শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন এবং সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, মাদকাসক্তদের একটি বড় অংশ কিশোর ও তরুণ। তাদের মধ্যে অনেকেই কৌতূহল, বন্ধুর প্ররোচনা বা হতাশা থেকে মাদক গ্রহণ শুরু করে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদকাসক্ত, যাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক সংকট।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মাদকের নীল দংশন থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে পরিবারকে প্রথম প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করতে হবে। অভিভাবকদের উচিত সন্তানের চলাফেরা, বন্ধু-বান্ধবের সংস্পর্শ এবং দৈনন্দিন অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন থাকা। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়মিত মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো জরুরি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম বলেন, “মাদক নির্মূলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। তরুণদের বিকল্প বিনোদন, কর্মসংস্থান ও মানসিক সহায়তা দিতে না পারলে সমস্যার সমাধান হবে না।
এছাড়া, মাদক ব্যবসা ও সেবন রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি, পুনর্বাসন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো এবং আসক্তদের চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং সেবা জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, পারিবারিক ভালোবাসা, সামাজিক সহায়তা এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ একসঙ্গে কাজ করলে মাদকের অভিশাপ থেকে মুক্তি সম্ভব।