সমাজে পারিবারিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসের জন্য দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে পরকীয়া সম্পর্কের কারণে পারিবারিক অশান্তি, বিবাহবিচ্ছেদ এবং সহিংস ঘটনার খবর বেড়েছে। এরই একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ ঘটেছে কুমিল্লার তিতাস উপজেলায়।
তিতাসে নজরুল ভূঁইয়া (৩৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহ চার টুকরো করে নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এক নারী ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন অটোরিকশা চালক হোসেন মিয়া (৩২) ও তার স্ত্রী স্মৃতি আক্তার (২৭)। পুলিশ জানায়, নিহতের সঙ্গে স্মৃতি আক্তারের পরকীয়া সম্পর্কের কারণে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, যা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।
পরকীয়া বলতে বোঝায় বিবাহিত জীবনে স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে গোপনে রোমান্টিক বা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এটি শুধু নৈতিক বিচ্যুতিই নয়, বরং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে ভাঙন ধরানোর একটি প্রধান কারণ।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দাম্পত্য জীবনে যোগাযোগের ঘাটতি, ভালোবাসার অভাব, একঘেয়েমি, মানসিক অসন্তুষ্টি কিংবা দায়িত্ববোধের অভাব পরকীয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মানসিক দুর্বলতা বা প্রলোভনও মানুষকে এই পথে নিয়ে যায়।
মনোবিজ্ঞানীরা জানান, পরকীয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে। প্রতারিত সঙ্গী প্রায়ই মানসিক আঘাত, হতাশা, আত্মসম্মানহানি এবং অবিশ্বাসের শিকার হন। এর পাশাপাশি সন্তানদের বেড়ে ওঠায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা তাদের ভবিষ্যতের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সামাজিকভাবে, পরকীয়া অনেক সময় পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা, আত্মীয়তার বন্ধন ভাঙন, এবং সামাজিক মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু দেশে এটি আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বাংলাদেশে মূলত পারিবারিক আইনের মাধ্যমে এর প্রভাব মোকাবিলা করা হয়, যেমন বিবাহবিচ্ছেদ বা ভরণপোষণ মামলা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরকীয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো খোলামেলা ও সৎ যোগাযোগ। দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সম্মান, বোঝাপড়া, এবং একে অপরের মানসিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা সমস্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রয়োজনে দম্পতি কাউন্সেলিংয়ের সহায়তা নেওয়াও প্রয়োজন।
সমাজকর্মীদের মতে, পরকীয়া শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক সংকটও বটে। তাই পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধি, নৈতিক শিক্ষা এবং পারিবারিক বন্ধন মজবুত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি।
উপদেষ্টা : মো: শরিফ হোসেন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: শাহরিয়া
প্রধান কার্যালয় : কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, ২নং দুর্গাপুর, দিগীরপাড়, কুমিল্লা
Design and Develop By Coder Boss