সংঘটিত হয়েছে এক হৃদয়বিদারক পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। মাত্র ৫০০ টাকার আর্থিক বিষয়ে তর্ক থেকে শুরু হওয়া বিবাদের জেরে, এক ১৬ বছর বয়সী কিশোর নিজের বড় ভাইকে ঘুমন্ত অবস্থায় দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। নিহত বড় ভাই আব্দুর রহিম রাফি (২৬) ছিলেন পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামে। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ৯ আগস্ট ভোরে বাড়ির ভেতর থেকে রাফির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত কিশোর স্বীকার করেছে, হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে সে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মাত্র ৫০০ টাকা। ছোট ভাই টাকাটি চেয়েও না পেয়ে, বড় ভাইয়ের গালিগালাজে মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পরদিন সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় রাফির গলায় ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যার পর দা ধুয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়, একইসাথে নিজের রক্তমাখা লুঙ্গিও সেখানে গোপন করে রাখে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাবা মারা যাওয়ার পর রাফি পরিবার চালানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। ছোট ভাইকে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তোলার চেষ্টা করলেও সে ছিল একপ্রকার উদাসীন। দিনের বেশিরভাগ সময় সে কাটাত বাড়িতেই, বিভিন্ন বিষয়ে দু’ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া ছিল নিত্যদিনের।
রাফির বিয়ে এবং পারিবারিক অন্যান্য সিদ্ধান্ত নিয়েও অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন ছিল চরমে, যা ধীরে ধীরে এই ট্র্যাজেডির দিকে ঠেলে দেয়।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান এবং কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু আফর মোঃ মাহফুজুল কবির।
তদন্তে ব্যবহার করা দা ও রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নম্বর–০৫, তারিখ–১০/০৮/২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড)।
এই ঘটনাটি আমাদের সমাজে ক্রমবর্ধমান পারিবারিক অশান্তি, অবহেলা, ও মানসিক চাপের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। পরিবারে সচেতনতা, মানসিক সহায়তা, এবং আর্থিক চাপ সামলানোর সঠিক কৌশল না থাকলে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
রক্তের সম্পর্ক যখন সহানুভূতির বদলে সংঘর্ষে পরিণত হয়, তখন তা শুধুই ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয় — এটি একটি সামাজিক ব্যর্থতা।