ঢাকা, ১২ আগস্ট ২০২৫
গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার রোধে এবং সরকারি সম্পদের সুরক্ষায় ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি ১১ আগস্ট (সোমবার) নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, ভালুকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে পরিচালিত এসব অভিযানে শতাধিক আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়, পাইপলাইন জব্দ করা হয়, জরিমানা আদায় করা হয় এবং অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মিরেরটেক, হাতুরাপাড়া এবং নয়াপুর এলাকায় আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ-সোনারগাঁওয়ের আওতায় জনাব মনিজা খাতুন, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার এলাকায় ৯০০টি অবৈধ আবাসিক বার্নার এবং একটি অবৈধ চুনা ভাট্টির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসময় ২ ইঞ্চি ব্যাসের ১০০ ফুট এবং ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৪০ ফুট এমএস পাইপ অপসারণ ও জব্দ করা হয়। প্লাস্টিক পাইপ উৎসস্থলে ধ্বংস করে দেওয়া হয় এবং প্রতিটি অবৈধ বিতরণ লাইন উৎস পয়েন্ট থেকে ক্যাপিং করা হয়।
একইদিন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় জনাব ওমর ফারুক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভাটের চর (নতুন রাস্তা), বালুয়াকান্দি ও গজারিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়।
এতে ৮টি ভাট্টি বিশিষ্ট ২টি অবৈধ চুন কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং ভাটের চর নতুন রাস্তায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় এক চায়ের দোকান মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একটি রেস্টুরেন্ট মালিক না থাকায় তা সীলগালা করা হয়। অভিযানে এমএস পাইপ ২০ ফুট ও ৫টি স্টার বার্নার জব্দ করা হয়।
এছাড়া, ভাট্টির মালিক ও জমির মালিকের বিরুদ্ধে গজারিয়া থানায় মামলা (FIR) দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এক্সক্যাভেটরের সাহায্যে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তিতাস জানায়, এ অভিযানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদের ফলে প্রতিঘণ্টায় প্রায় ১৬,০০০ ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হয়েছে, যার দৈনিক বাজারমূল্য আনুমানিক ২,৬০,৯০০ টাকা।
জনাব মিল্টন রায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কড়াইল বস্তির ৬টি স্পটে অভিযান চালানো হয়। এখানে প্রায় ১,০৫০টি অবৈধ আবাসিক ডাবল বার্নারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং ৫৬০ ফুট পাইপ জব্দ করা হয়।
আঞ্চলিক রাজস্ব শাখা-ভালুকা ও জোনাল বিক্রয় অফিস-ভালুকার বিশেষ অভিযানে বকেয়ার জন্য ১টি আবাসিকের ২টি ডাবল চুলা এবং অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করায় ৪টি আবাসিকের ৬টি ডাবল চুলাসহ মোট ৫টি আবাসিকের ৮টি ডাবল চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে ৬৭,৩২০ টাকা বকেয়া আদায় করা হয়।
জনাব সিমন সরকার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গাজীপুরের সুরাবাড়ি, কাশিমপুর ও দেওয়ান মার্কেট এলাকায় ৩টি স্পটে অভিযান চালানো হয়। প্রায় ১৬০টি বাড়ির ৪২০টি ডাবল চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসময় ২১০ ফুট ৩/৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ, ২৫০ ফুট ১ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ, ১৫০ ফুট প্লাস্টিক থ্রেট পাইপ এবং ১২টি সম্পূর্ণ অবৈধ রেগুলেটর জব্দ করা হয়।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১১ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে ২৯৬টি শিল্প, ৩২৫টি বাণিজ্যিক ও ৬৩,৯৬৫টি আবাসিক সংযোগসহ মোট ৬৪,৫৮৬টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। একই সময়ে ১,২২,৯৯৩টি বার্নার ও ২৪১.৫ কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ করা হয়।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মোঃ আল আমিন বলেন,
অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে তিতাস গ্যাসের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এতে সরকারি সম্পদের অপচয় রোধ ও গ্যাস সাশ্রয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।”