লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৌশলগত এলাকা ওয়াদি আল-শাতি পৌরসভায় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও লিবিয়া মাফিয়ার প্রভাবাধীন ছিল, যেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সহায়তায় অবৈধ অস্ত্র মজুত, মানবপাচার ও মাদক ব্যবসা চলছিল।
গতকাল রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত প্রায় আট ঘণ্টা ধরে চলা এ অভিযানে অংশ নেয় ১০১তম পদাতিক ব্যাটালিয়ন, ৬৭৬তম পদাতিক ব্যাটালিয়ন এবং স্থল বাহিনীর বিশেষ ইউনিট। অভিযানের সময় একাধিক এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয় এবং সেনারা সমন্বিত কৌশলে টার্গেট স্থাপনাগুলোতে প্রবেশ করে।
গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী জানতে পারে, ওয়াদি আল-শাতি ও ত্রিপলির কিছু গ্রামীণ বাড়ি, খামার ও গুদামকে অবৈধ অস্ত্র মজুত এবং সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে লিবিয়া মাফিয়া চক্র ও আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। এ নেটওয়ার্ক শুধু লিবিয়ায় নয়, সাহারা-উপসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সঙ্গে যুক্ত।
অভিযানে উদ্ধার করা হয় —
সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ অস্ত্রভাণ্ডারের অনেকগুলোই সীমান্তপথে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে এবং এর বেশিরভাগই যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত ছিল। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের মান এতটাই উন্নত যে তা আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই অস্ত্রভাণ্ডারের পেছনে রয়েছে লিবিয়া মাফিয়া চক্র, যারা মাদক ব্যবসা, মানবপাচার এবং অস্ত্র চোরাচালান একযোগে পরিচালনা করছে। এই চক্রের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে বিদেশি অস্ত্র ব্যবসায়ী, আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল ও ইউরোপের অপরাধ নেটওয়ার্ক। জব্দ হওয়া নথি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই নেটওয়ার্ক আফ্রিকার মরুভূমি রুট, লিবিয়ার উপকূলীয় এলাকা এবং ইউরোপগামী সমুদ্রপথকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযানের মাধ্যমে লিবিয়া মাফিয়া ও আন্তর্জাতিক অস্ত্র চক্রের একটি বড় সরবরাহ শৃঙ্খল ধ্বংস হয়েছে। আটক করা হয়েছে কয়েকজন উচ্চপদস্থ সদস্য, যাদের মধ্যে একজন আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত অস্ত্র ব্যবসায়ী। অভিযানে কোনো সেনা হতাহত হয়নি, তবে কিছু এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
লিবিয়ার সামরিক কমান্ডাররা ঘোষণা দিয়েছেন যে এ ধরনের অভিযান আরও বিস্তৃত আকারে চালানো হবে এবং সীমান্তবর্তী এলাকা, উপকূলীয় অঞ্চল ও মরুভূমি রুটে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হবে। স্থানীয় জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের তথ্য নিরাপত্তা বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, লিবিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে এই অভিযান একটি বড় অগ্রগতি। তারা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া মাফিয়া ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা কঠিন হবে। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার, অর্থনৈতিক অবরোধ এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বাড়ানোই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ।
এই সফল অভিযানের পর স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। দীর্ঘদিনের সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও মাফিয়া তৎপরতার আতঙ্কে থাকা বাসিন্দারা আশা করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে এলাকা ধীরে ধীরে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যাবে।
উপদেষ্টা : মো: শরিফ হোসেন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: শাহরিয়া
প্রধান কার্যালয় : কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, ২নং দুর্গাপুর, দিগীরপাড়, কুমিল্লা
Design and Develop By Coder Boss