বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন
Title :
কাটাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ইউসুফ মোল্লা টিপুর মানবিক উদ্যোগ “বি.আই.আর.সি” প্রধান উপদেষ্টা হলেন – এডভোকেট শেখ শওকত হোসেন ফরহাদ অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ ৩ দফা দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে”—তারেক রহমান ভোলাহাটে ভার্ক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান অনুষ্ঠিত! অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাস গ্যাসের সাঁড়াশি অভিযান, জরিমানা আদায় রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নে নিবন্ধন বিলম্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যতসব কীর্তন! “তনুর বয়স হতো আজ ২৯: নয় বছরেও বিচারহীন সোহাগী জাহান তনুর হত্যা মামলা” উঁচু মঞ্চের আড়ালে জনগণের নীরব কান্না ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির কমিটিতে ত্যাগীদের পরিবর্তে স্থান পেয়েছে আওয়ামী লীগের দোসররা!

আলোকছায়ার ফাঁদে: একটি অনলাইন প্রতারণার চিত্রকথা::”

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫
  • ২০ Time View

মীর মোঃ সাজন

 

রাত গভীর হলে যখন শহরের ব্যস্ততা স্তব্ধ হয়ে পড়ে, ঘুমন্ত দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে তখনো জেগে থাকে কিছু নিঃশব্দ শিকারি। তারা নয় ছিনতাইকারী, নয় চোর—তারা এক অন্যরকম লুটেরা, যারা ঢুকে পড়ে আপনার যাপিত জীবনের অন্দরমহলে, কেড়ে নেয় আপনার আস্থা, সম্মান, অর্থ, এমনকি আপনার পরিচয়।

 

এই শিকারিরা আপনার জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় না, তারা আসে ইনবক্সের ভেতর দিয়ে। আর তার হাতছানি হয় এক সুদর্শনা নারীর ছবিতে মোড়ানো এক ফাঁদ—যা দেখতে যতটা কোমল, অন্তরে ততটাই করাল।

 

প্রথম দৃশ্যপটে সে আসে এক নরম ‘হ্যালো’ নিয়ে। নাম—‘পূজা’, ‘সিমরন’, কিংবা ‘মেঘলা’। আপনাকে সে জিজ্ঞেস করে—”Can you send me your WhatsApp number?” আপনি হয়তো ভাবেন, ‘এ আর এমন কী’—ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, প্রভাবশালী কেউ হলে তো এসব আদান-প্রদান হরহামেশাই হয়। কিন্তু আপনি জানেন না, আপনি ঠিক এইখানেই তাঁর পাতা মায়াজালের প্রথম ধাপে পা রাখলেন।

 

⚠️এরপর…

 

হোয়াটসঅ্যাপে সে আপনাকে নানা প্রশ্ন করে—আপনার পেশা, বসবাস, ব্যবসার ধরণ, পরিচিতজন। কথার ফাঁকে ফাঁকে সে বোঝার চেষ্টা করে আপনি আর্থিকভাবে কতটা স্থিতিশীল। তার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু আপনি নন, আপনার ‘সামর্থ্য’।

 

পরবর্তী ধাপে, আসে চতুরতার বুনন। সে আপনাকে ছবি পাঠায়—আলোছায়ায় ভরা দৃষ্টিনন্দন কিছু মুহূর্ত। হয়তো কিছু ভিডিওও। আপনিও আবেগের তাড়নায় তাতে ‘লাইক’ দেন। হয়তো মুগ্ধ হয়ে বলেন, “You look nice!”

 

এই সময়েই আসে ভিডিও কলের প্রস্তাব। সে আর নিজের শরীর লুকিয়ে রাখে না। এক অস্বস্তিকর সাহসে আপনাকে সে টেনে নিয়ে যায় একান্ত আলাপে, যেখানে আপনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন—এ সত্যি তো? না কি অভিনয়? আপনি বুঝে ওঠার আগেই আপনি তার চরকিতে ঘুরতে শুরু করেন।

 

আর যারা এই ধাপে সাড়া না দেন—তাদের জন্য অপেক্ষা করে আরেক ফাঁদ। তারা পায় চাকরির অফার, অনলাইনে আয়ের প্রলোভন, ইউটিউব বা ইনভেস্টমেন্ট লিংকের ছলচাতুরি। আপনি সেই লিংকে ক্লিক করতেই, আপনার তথ্য চলে যায় তার দখলে।

 

তবে, সাম্প্রতিক কৌশল আরও শাণিত। এখন শুধু ব্ল্যাকমেইল নয়, পুরো ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাঁয়তারা!

 

আপনাকে বলবে—“আপনার ফোনে একটি কোড যাবে, সেটা শুধু ‘Ok’ করে দিন।”

আপনি কিছু না ভেবেই দিয়ে দিলেন। পরক্ষণেই সে চেয়ে বসে WhatsApp-এর পিন নম্বর। আপনি দিয়ে দিলে—অভ্যন্তরীণ দরজা খুলে দিলেন আপনি নিজেই। এখন থেকে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, জিমেইল—সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে।

 

সে পাল্টে ফেলে আপনার পাসওয়ার্ড। আপনার নামেই টাকা চাইতে শুরু করে প্রিয়জনদের কাছ থেকে। আপনি বুঝতেও পারবেন না কখন, কিভাবে আপনার ছবি, গোপন কথোপকথন, ব্যক্তিগত দলিল তার হাতে পৌঁছে গেল।

 

আপনার একটি ছোট ভুল, একটিমাত্র ক্লিক—পরিণত হলো জীবনভর অনুশোচনার বিষাক্ত সুরে। আপনি একাকী, ভীত, লজ্জিত—কারণ আপনি জানেন না কীভাবে বলবেন যে আপনি ভুল করেছিলেন।

 

এই প্রতারণার মূল চালিকা নারীসুলভ রূপ। তার আইডিগুলোতে you’ll find খোলামেলা ছবি, কখনো নাম সনাতন রূপে, লোকেশন হয়তো ভা-র-ত কিংবা বাংলাদেশ দেখাবে। ১০ জনের মধ্যে ৮ জন তার ফাঁদে পা দিয়ে দেয়, কারণ তারা জানে—পুরুষের চোখে ‘সৌন্দর্য’ নামক দরজাটি খুলে দিলে ভিতরে প্রবেশ করা সহজ।

 

এই কাহিনী শুধু ফেসবুকে নয়—হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু, ইনস্টাগ্রাম—সবখানেই চলছে।

 

এ যেন—এক রঙিন জাল, যার ভিতরে ঢুকলেই আর ফেরা হয় না সহজে। আপনি হতে পারেন শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক—তবুও এই জাল এড়ানো কঠিন, যদি না থাকে সজাগ চেতনা।

 

♦️তাই জেনে রাখুন—

কোনো অপরিচিত আইডি থেকে মেসেজ এলে কখনোই ব্যক্তিগত নম্বর দেবেন না।

ভিডিও কলে যাওয়া, লিঙ্কে ক্লিক করা, ওয়ান-টাইম পিন (OTP) শেয়ার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে ‘Two Step Verification’ চালু রাখুন।

■ সন্দেহজনক মেসেজ বা ভিডিও প্রলোভন দেখলেই রিপোর্ট করুন।

■ আপনার সন্তান, ভাই, বন্ধু বা পরিবারের উঠতি তরুণদের সচেতন করুন এই প্রতারণা নিয়ে।

 

শেষ কথা—এই যুগে প্রতারণা হচ্ছে কৃত্রিম কোমলতার মুখোশে। যে ভালোবাসার মুখোশ পরে আসে, সে আসলে আপনাকে ভালোবাসে না—আপনার ভিতরটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চায়। আপনি যদি প্রতারিত হন, অপরাধ আপনার না, অপরাধ অন্ধ বিশ্বাসের।

 

তাই আসুন, জেগে উঠি… জেনে রাখি—

 

“সুন্দরীর হাসির আড়ালে কখনও কখনও দাঁত বের করা হিংস্রতা লুকিয়ে থাকে।”

 

আমরা যদি না জানি, তবে হারিয়ে যাবে শুধু আমাদের তথ্য নয়—হারিয়ে যাবে আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস, ও এই জীবনের শান্তি।

 

সচেতন হোন,

সতর্ক করুন,

শেয়ার করুন—আরও অনেককে বাঁচান এই ডিজিটাল দানবের হাত থেকে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102