১১ আগস্ট সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে বিপদগ্রস্ত দুটি নৌকা থেকে মোট ৭৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সফল অভিযানে উদ্ধার করেছে জার্মান বেসরকারি সংস্থা সি-ওয়াচ-এর উদ্ধারকারী জাহাজ সি-ওয়াচ ফাইভ। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে একজন সন্তানসম্ভবা নারী ছিলেন, যার জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছিল।
সি-ওয়াচ জানায়, ১১ আগস্ট সকালে প্রথম নৌকাটি থেকে ৬৭ জনকে উদ্ধার করা হয়। ওই সময় লিবিয়ার কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ দ্রুতগতিতে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসছিল। এনজিওটির অভিযোগ, লিবিয়ার কোস্টগার্ড আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন অমান্য করে অভিবাসীদের সমুদ্র থেকে আটক ও জোরপূর্বক লিবিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, ২০২৪ সালে অন্তত ২১ হাজার অভিবাসীর যাত্রা ঠেকিয়েছে লিবিয়ার কোস্টগার্ড।
সি-ওয়াচের পক্ষ থেকে বলা হয়, সন্তানসম্ভবা ওই নারীকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বারবার মাল্টা ও ইটালিকে বার্তা পাঠানো হলেও দীর্ঘ সময় তারা কোনো তৎপরতা দেখায়নি। অবশেষে তাকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপে নামানোর ব্যবস্থা করা হয়। সংস্থাটির মুখপাত্র জুলিয়া মেসমার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মাল্টা ও ইটালি দীর্ঘ সময় ধরে ওই নারী ও তার অনাগত সন্তানের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। এটা মানুষের জীবন নিয়ে যেন দাবা খেলা।”
এর আগের রাতে সি-ওয়াচ ফাইভ আরও ৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছিল। বর্তমানে উদ্ধার হওয়া সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ে জাহাজটি ইতালির সালেরনো বন্দরের দিকে রওনা দিয়েছে। লাম্পেদুসা থেকে সালেরনো পৌঁছাতে অন্তত তিন দিন সময় লাগবে।
অভিবাসী রুট ও ঝুঁকি:
লিবিয়া উপকূল থেকে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরের রুটটি ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার অন্যতম ব্যস্ততম ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ হিসেবে পরিচিত। এখানে মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয়ভাবে অবৈধভাবে অভিবাসীদের ছোট ও নাজুক নৌকায় ভূমধ্যসাগরে পাঠায়। প্রায়ই এসব নৌকা ইঞ্জিন বিকল হয়ে সমুদ্রে আটকে পড়ে, উল্টে যায় বা ডুবে যায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে আটক হওয়া অভিবাসীদের অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখা হয় এবং অনেক সময় তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
শুধু ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসেই সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেবে এক হাজারেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। সি-ওয়াচ, মিশন লাইফলাইন, এসওএস মেডিটেরানির মতো এনজিওগুলো প্রায়ই এই বিপদসংকুল পথ থেকে অভিবাসীদের উদ্ধার করে থাকে। তবে এ ধরনের উদ্ধার অভিযান প্রায়ই ইউরোপীয় দেশগুলোর রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও আইনি জটিলতার মুখে পড়ে।