মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন এবং দুনিয়ার জীবনে সব সমস্যার সমাধানের মাধ্যম দোয়া। দোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনা । বান্দা যখন আল্লাহর কাছে চায়, দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক কোন অপরাধে লিপ্ত না হলে আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, 'আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, (তাদের বলে দিন) আমি তো নিশ্চয়ই নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায়, তারা সঠিক পথে চলবে' (সুরা: বাকারাহ, আয়াত: ১৮৬)।
এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, বান্দার সব দোয়াই মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছে এবং আল্লাহ সব দোয়ারই প্রতিদান দেন। তবে কখনো কখনো বান্দার কল্যাণার্থে দোয়ার ফলাফল দৃশ্যমান হতে দেরি হতে পারে। নিম্নে দোয়ার ফলাফল দৃশ্যমান হতে দেরি হওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরছি:
আরো উত্তম কিছু দেবেন বলে: অনেক সময় মহান আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করলেও তাকে তাৎক্ষণিক কাঙ্ক্ষিত বস্তু দেন না, যা দেখলে বাহ্যত মনে হয় যেন দোয়া কবুল হচ্ছে না, কিন্তু এর মূল কারণ হলো, বান্দা যে জিনিসটি নিজের জন্য কল্যাণকর ভাবছে, মূলত তাতে তার জন্য কল্যাণ নেই, আল্লাহ তাকে আরো উত্তম প্রতিদান দেওয়ার জন্য এই দোয়ার ফল প্রকাশ করছেন না।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, 'এবং হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না' (সুরা বাকারাহ, আয়াত: ২১৬)।
হাদিস শরিফে এসেছে, এক মৃগী রোগে আক্রান্ত নারী নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে তার এই রোগ থেকে পরিত্রাণের দোয়া চাইল, তখন নবীজি (সা.)-কে এই কষ্টে ধৈর্যধারণ করার বিনিময়ে জান্নাতের সুসংবাদ দিলে তিনি দুনিয়ায় আর এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি না পাওয়ায় হতাশ হননি,(বুখারি, হাদিস : ৫৬৫২)।
সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ এভাবেই তাঁর বান্দাদের ছোট ছোট বিপদের মাধ্যমে বড় প্রতিদান দিয়ে থাকেন। হয়তো বান্দার দোয়ার ফলাফল তাৎক্ষণিক দিয়ে দিলে সে ওই বড় প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হতো। বিপদ দূর করবেন বলে অনেক সময় কিছু দোয়ার ফলাফল দৃশ্যমান না হওয়ার কারণ হলো, সে দোয়ার পুরস্কারের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার বড় কোনো বিপদ দূর করে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, যে বিপদ-আপদ এসেছে আর যা (এখনো) আসেনি, তাতে দোয়ায় কল্যাণ হয়। অতএব, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা দোয়াকে আবশ্যিক করে নাও, (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৮)।
অসংলগ্ন দোয়া করলে, কোনো গুনাহ সহজ হওয়ার জন্য দোয়া বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন
করার দোয়া করলে সে দোয়া কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। মুমিন তার কল্যাণকর কোনো ফলাফলও দেখতে পায় না। জাবির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, কোনো ব্যক্তি (আল্লাহ তায়ালার কাছে) কোনো কিছু দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করেন কিংবা তার পরিপ্রেক্ষিতে তার থেকে কোনো অকল্যাণ প্রতিহত করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য প্রার্থনা না করে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮১)। গুনাহের কারণে কখনো কখনো মানুষের দোয়ার ফলাফল প্রকাশ পায় না। হারাম উপার্জন, হারাম ভক্ষণ দোয়া কবুলে বাধা তৈরি করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, 'রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে হালাল ভক্ষণের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এক ব্যক্তির উপমা দিয়ে বলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধূলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, 'হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়াও তিনি কবুল করতে পারেন?(মুসলিম, হাদিস: ২২৩৬)।
অর্থাৎ এ ধরনের কাজগুলো দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বান্দা যদি এগুলো থেকে খাঁটি মনে তাওবা করে ফিরে আসে, তাহলে ইনশাআল্লাহ সে তার দোয়ার ফলাফল পাবে।
তাই মুমিনের উচিত মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে পথ চলা এবং দোয়া করতে থাকা। শুধু মনে রাখতে হবে, সৎ থাকা,সুদ - ঘুষ বর্জন করা, মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা এবং কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে দুনিয়ার জীবন পরিচালিত করা।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বুড়িচং, কুমিল্লা।০১৭১৮২২৮৪৪৬
উপদেষ্টা : মো: শরিফ হোসেন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: শাহরিয়া
প্রধান কার্যালয় : কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, ২নং দুর্গাপুর, দিগীরপাড়, কুমিল্লা
Design and Develop By Coder Boss