উপশিরোনাম: সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভাঙতে লিবিয়া-তিউনিসিয়ার যৌথ অভিযান
তিউনিসিয়ার একটি আদালত লিবিয়ার সাবরাথা শহরে জঙ্গি প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আনসার আল-শরিয়ার একজন সদস্যকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। লিবিয়ায় ধরা পড়ার পর দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় তাকে তিউনিসিয়ায় হস্তান্তর করা হয়।
বিচার বিভাগীয় সূত্র অনুযায়ী, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাবরাথার কুখ্যাত শিবিরে আইএসআইএসসহ বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠীর সদস্যদের অস্ত্র ব্যবহার, বিস্ফোরণ প্রস্তুত ও যুদ্ধ কৌশলে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় তিনি সিরিয়ায় আইএসআইএস যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
বিচারের সময় আসামী স্বীকার করেন যে, তিনি নিয়োগপ্রাপ্তদের যুদ্ধকৌশল শিখিয়েছেন এবং লিবিয়া-তিউনিসিয়া সীমান্ত পেরিয়ে যোদ্ধা পাঠানোর কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।
উপকূলীয় শহর সাবরাথা একসময় উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপমুখী জিহাদি নেটওয়ার্কের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। এখান থেকে বহু বিদেশি যোদ্ধা সিরিয়া ও ইরাকে গেছে, যারা পরবর্তীতে একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিল। ২০১৬ সালে লিবিয়ায় বড় ধরনের সামরিক অভিযানের পর শহরটির সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়, তবে নেটওয়ার্কের প্রভাব পুরোপুরি শেষ হয়নি।
২০১৩ সালে তিউনিসিয়ায় আনসার আল-শরিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। গোষ্ঠীটির নেতৃত্বে ছিলেন সাইফাল্লাহ বেন হাসান, যিনি ‘আবু ইয়াদ’ নামে পরিচিত। তিনি লিবিয়ায় পালিয়ে গিয়ে ২০১৯ সালে মালিতে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন। তার মৃত্যুর পরও গোষ্ঠীর অবশিষ্ট সদস্যরা সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় ছিল।
তিউনিসিয়া ও লিবিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসী যোদ্ধাদের চলাচল রোধে কাজ করছে। সাম্প্রতিক এই দণ্ডপ্রদানকে দুই দেশের যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিউনিসিয়ার এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন,
এই রায় শুধু একজন জঙ্গিকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং পুরো সীমান্তবর্তী নেটওয়ার্কের প্রতি একটি বার্তা—কেউ আইনের বাইরে নয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, যদিও সাবরাথা ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তবে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট সেল এখনও সক্রিয়। তারা চোরাচালান রুট ও অবৈধ সীমান্তপথ ব্যবহার করে যোদ্ধা ও অস্ত্র স্থানান্তরের চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তর আফ্রিকায় ছিটমহল-ভিত্তিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রয়োজন।