উঁচু মঞ্চে দাঁড়ানো মানে শুধু উচ্চতায় নয়—এটি একধরনের প্রতীক। যে মানুষ মঞ্চে ওঠে, তার কণ্ঠস্বর দূরে পৌঁছায়, তার ভাবমূর্তি বড় হয়, এবং সাধারণ মানুষের চোখে সে হয়ে ওঠে একজন প্রভাবশালী চরিত্র। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায়, উঁচু মঞ্চে দাঁড়ানো মানুষের অধিকাংশই অন্তরে জনগণের দুঃখ-কষ্ট বা প্রকৃত সমস্যার কথা ভাবেন না। তারা ব্যস্ত থাকেন নিজেদের আভিজাত্য, সম্মান, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, পারিবারিক মর্যাদা এবং ‘স্যার’ সম্বোধনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ভণ্ডামির জগতে।
সমাজের সাধারণ মানুষ যেখানে প্রতিদিন সংগ্রাম করছে—চাকরির জন্য ঘুরছে, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবে দিশেহারা, সেখানে উঁচু মঞ্চের মানুষজন নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব ধরে রাখার খেলায় ব্যস্ত। জনগণের অর্থ লুণ্ঠন, স্বার্থ দখল, এবং নানা প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে তারা জনগণকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ক্ষমতার মোহ তাদের এতটাই আচ্ছন্ন করে যে, তারা ভুলে যায় এই ক্ষমতা একদিন হাতছাড়া হবেই।
আমাদের সমাজ আজ এক অদ্ভুত দ্বৈত অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে সাধারণ মানুষ আশাভরা চোখে তাকিয়ে থাকে তাদের নেতাদের দিকে, অন্যদিকে সেই নেতারা জনগণের আস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে কেবল নিজের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকে। এভাবে চলতে থাকলে সমাজে বৈষম্য, অবিচার, আর ক্ষোভ আরও বেড়ে যাবে।
উঁচু মঞ্চে দাঁড়ানো যদি শুধু প্রদর্শনী হয়, তবে তা জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। প্রকৃত নেতৃত্বের অর্থ হলো—মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনগণের কথা শোনা, তাদের সমস্যার সমাধান খোঁজা এবং নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তাদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আজকের পৃথিবীতে এই মানবিক নেতৃত্বের বড় অভাব দেখা দিয়েছে।
অতএব, সময় এসেছে মানুষকে বোঝার, জনগণের চোখের জল দেখার, তাদের কণ্ঠস্বর শোনার। কারণ, জনগণই আসল শক্তি। মঞ্চ যত উঁচুই হোক, সেই মঞ্চ ভেসে থাকবে না যদি জনগণের আস্থা আর ভালোবাসা না থাকে।