আজ বেঁচে থাকলে সোহাগী জাহান তনুর বয়স হতো ২৯ বছর। কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ মাত্র ২০ বছর বয়সে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাকে। ঘটনার নয় বছর পার হলেও এখনও বিচার মেলেনি এই আলোচিত মামলায়।
ঘটনার দিন ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার একটি বাসায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হন তনু। রাতের অন্ধকারে সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গলে উদ্ধার করা হয় তার নিথর দেহ। ময়নাতদন্ত ও প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিললেও মামলার তদন্তে আজও কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
তনু ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সংসারের খরচ চালাতে এবং নিজের পড়াশোনার ব্যয় মেটাতে টিউশনি করতেন তিনি। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিলো, একদিন লেখাপড়া শিখে বড় হবেন তাদের আদরের মেয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন নির্মমভাবে থেমে যায় এক ভয়ঙ্কর রাতে।
মানবাধিকারকর্মী, ছাত্র সংগঠন, নারী আন্দোলনের কর্মীরা একাধিকবার এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তুললেও আজও তা অধরাই রয়ে গেছে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অনেকেই বলেছেন—“এমন সুরক্ষিত স্থানে যদি তনুর মতো একটি মেয়ের মরদেহ পড়ে থাকতে পারে, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”
নয় বছরেও বিচার না পাওয়ায় হতাশ তনুর পরিবার। তারা আজও আশা করে আছেন, একদিন না একদিন হত্যাকারীরা আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতার চিত্র বলছে, দীর্ঘসূত্রিতায় মামলাটি যেন হারিয়ে যাচ্ছে সময়ের অন্ধকারে।
তনুর মৃত্যু আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়মুক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি—এটি শুধু তনুর নয়, দেশের সকল মেয়ের নিরাপত্তাহীনতার প্রমাণ বহন করে।
মানবাধিকারকর্মীদের মতে, “তনুদের ভুলে গেলে চলবে না। ভুলে গেলে হারিয়ে যাবে আমাদের ন্যায়বিচারের আশা।”