নিজস্ব প্রতিবেদন
মানব সেবাই পরম ধর্ম” — এ শুধু একটি প্রবাদ নয়, এটি এক গভীর জীবনদর্শন। সভ্যতার ইতিহাসের যত উন্নয়ন, যত অগ্রগতি—তার পেছনে রয়েছে কিছু মহৎ হৃদয়ের মানুষের অবদান, যারা নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের জন্য কিছু করে গেছেন। আজ আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে প্রযুক্তি অগ্রসর হলেও মানবতা অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ছে। এই সংকটময় মুহূর্তে মানবসেবা আমাদের পথ দেখাতে পারে।
মানবসেবা কী?
মানবসেবা মানে কেবল অর্থ দান নয়। এটি হচ্ছে ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, এবং একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। পথের ধারে থাকা ছিন্নমূল শিশুটিকে একবেলা খাওয়ানো, বৃদ্ধাশ্রমে সময় কাটানো, রক্তদান করা কিংবা কোনো দুর্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াও মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত।
আজকের সমাজে মানবতার অবস্থান
আমরা এখন এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে মানুষ অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। ব্যস্ততা, ব্যক্তিস্বার্থ আর আত্মকেন্দ্রিকতা যেন ধীরে ধীরে মানবিক গুণাবলিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। মানুষ মানুষের প্রতি আগের মতো আন্তরিক নয়। অথচ মানবিকতা ছাড়া সমাজ একসময় অমানবিক এক কাঠামোতে পরিণত হয়।
একজন সাংবাদিকের দৃষ্টিতে মানবসেবা
আমি, সাংবাদিক শাহরিয়া, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সমাজের নানা স্তরের মানুষের মুখোমুখি হই। কখনো দেখি অভাবী মা তার সন্তানের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে পারেন না, কখনো দেখি দুর্ঘটনায় আহত মানুষ রাস্তায় পড়ে থাকে সাহায্যের আশায়। এই চিত্রগুলো কেবল সংবাদ নয়, এগুলো আমাদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো বাস্তবতা।
সাংবাদিকতা কেবল তথ্য পরিবেশন নয়, এটি সমাজের দর্পণ। এই দায়বদ্ধতা থেকে আমি মনে করি, সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের প্রত্যেককেই মানবিক হতে হবে। প্রতিটি সংবাদ যদি মানবতার পক্ষে দাঁড়ায়, তবে সমাজে অন্ধকার নয়, আলো ছড়াবে।
মানবসেবার উদাহরণ আমাদের মাঝেই
আমাদের দেশে এমন অনেক তরুণ আছেন যারা নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কেউ খাবার বিতরণ করছেন, কেউ শীতবস্ত্র দিচ্ছেন, কেউ আবার গ্রামে গিয়ে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছেন। এরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন—কারণ তারা জানেন, একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
আমাদের করণীয়
ছোট ছোট উদ্যোগ নিন — একজন মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।
সময় দিন — টাকা না থাকলেও সময় দেওয়া যায়।
সংগঠিত হোন — একা নয়, দল গঠন করে বৃহৎ পরিসরে কাজ করুন।
সচেতন হোন — আশেপাশের মানুষদের অবস্থার খোঁজ রাখুন।
মিডিয়া ব্যবহার করুন — মানবসেবার উদ্যোগগুলো তুলে ধরুন যাতে অন্যরাও উৎসাহিত হয়।
উপসংহার
মানবসেবা এমন এক কাজ যা ধর্ম, জাতি, শ্রেণি—সব কিছুর ঊর্ধ্বে। এটি মানুষের মধ্যে এক গভীর সংযোগ তৈরি করে, সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনে। আসুন, আমরা সবাই মানবতার পক্ষে দাঁড়াই, নিজ নিজ জায়গা থেকে একটুখানি এগিয়ে আসি।
মানবিক সমাজ গড়ার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, আমাদের সবার। কারণ, এই সমাজ আমাদের, এবং এই সমাজে আলো জ্বালাতে হলে আমাদের হৃদয়ে জ্বলতে হবে ভালোবাসার আলো।