লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর টোব্রুকে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে।
জয়েন্ট সিকিউরিটি অপারেশনস রুম – আল-বুতনান-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে নিরাপত্তা পরিকল্পনার প্রধান মেজর জেনারেল সালাহ মাহমুদ আল-খাফিফি এবং লিবিয়ান আরব সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল কমান্ড ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নির্দেশে।
নিরাপত্তা বাহিনীর লক্ষ্য— শহরের ভেতরে বৈধ পরিচয়পত্র ও নিবন্ধন ছাড়া বসবাসরত বিদেশিদের শনাক্ত করা, তাদের গ্রেপ্তার করা এবং জননিরাপত্তা রক্ষা করা।
এজন্য অভিবাসীদের বৈধ পাসপোর্ট ও স্বাস্থ্যসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, পাশাপাশি বসবাসের স্থানও যথাযথভাবে নিবন্ধনের আওতায় আনতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে এখন পর্যন্ত যেসব বিদেশি নাগরিকদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে নাইজেরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এছাড়া বাংলাদেশি অভিবাসীদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে, যদিও সংখ্যায় তারা অপেক্ষাকৃত কম।
নাইজেরিয়ানদের পাশাপাশি কয়েকটি সাব-সাহারান দেশের নাগরিকদেরও সনাক্ত করা হয়েছে।
অবৈধ বসতবাড়ি খালি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসন
অভিযানে ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ভাড়া নেওয়া ও ব্যবহার করা অস্বাস্থ্যকর, অপরিচ্ছন্ন ও অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি খালি করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর অনেক ক্ষেত্রেই মানবপাচারকারীদের ঘাঁটি বা অপরাধী কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
নিরাপত্তা কক্ষ ঘোষণা করেছে— যারা কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের ঘর ভাড়া দিয়েছেন, তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিরাপত্তা কক্ষে রিপোর্ট করতে হবে।
তাদের আইনি ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা যাচাই করে প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানা, সম্পত্তি জব্দ ও ফৌজদারি মামলা করা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে টোব্রুক শহর হয়ে উঠেছে আফ্রিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার একটি মানবপাচার করিডোর।
সাগরপথে ইউরোপ অভিমুখী যাত্রার প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে অনেকেই এখানে এসে অবস্থান করছেন। ফলে এই অভিযান কেবল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও মানবাধিকার ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
নিরাপত্তা বাহিনী সকল নাগরিক ও সম্পত্তির মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেছে—
জনস্বার্থে দয়া করে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করুন। সন্দেহজনক কিছু দেখলে নিরাপত্তা কক্ষে অবহিত করুন এবং আইনবিরোধী কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
টোব্রুকের বর্তমান অভিযান আসলে বৃহত্তর আফ্রিকা-ইউরোপ অভিবাসন সংকটের প্রতিফলন। দক্ষিণ সাহারা অঞ্চল থেকে আগত বহু নাগরিক, বিশেষ করে নাইজেরিয়ানরা, লিবিয়াকে ইউরোপে পৌঁছানোর সেতুবন্ধন হিসেবে ব্যবহার করছেন। এর ফলে লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক কাঠামো হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের উপস্থিতি এই সংকটের আরেকটি দিক উন্মোচন করছে— যেখানে বৈধতার চেয়ে মরিয়া চেষ্টাই প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।