বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১২ পূর্বাহ্ন
Title :
কাটাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ইউসুফ মোল্লা টিপুর মানবিক উদ্যোগ “বি.আই.আর.সি” প্রধান উপদেষ্টা হলেন – এডভোকেট শেখ শওকত হোসেন ফরহাদ অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ ৩ দফা দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে”—তারেক রহমান ভোলাহাটে ভার্ক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান অনুষ্ঠিত! অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাস গ্যাসের সাঁড়াশি অভিযান, জরিমানা আদায় রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নে নিবন্ধন বিলম্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যতসব কীর্তন! “তনুর বয়স হতো আজ ২৯: নয় বছরেও বিচারহীন সোহাগী জাহান তনুর হত্যা মামলা” উঁচু মঞ্চের আড়ালে জনগণের নীরব কান্না ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির কমিটিতে ত্যাগীদের পরিবর্তে স্থান পেয়েছে আওয়ামী লীগের দোসররা!

ভোলাহাটে নির্যাতিত এক নারী! ঘুরছে দ্বারে দ্বারে! পাচ্ছে না ন্যায্য বিচার!

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩১ Time View

ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি:

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে এক নির্যাতিত অসহায় তিন সন্তানের জননী তাজকেরা পারিবারিক কলোহের জের ধরে কোন জায়গায় ন্যায্য বিচার না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে! তিন সন্তান নিয়ে গ্রাম মোড়ল, থানা এমনকি কোর্টেও বিচার চেয়ে কোন সুরাহা না পেয়ে অবশেষে জামাই-বেটির বাড়ীতেই অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে।যেনো এ দুনিয়ায় সকলেরই কাছে মাথার বোঝা হয়ে রয়েছে তাজকেরা ও তার তিন সন্তান।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরধরমপুর মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের মোঃ হাফিজুদ্দিনের মেয়ে তাজকেরা খাতুনের সাথে একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাইবুর রহমানের সাথে প্রায় ২২ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘদিনের সংসারে সুখ-শান্তি না থাকলেও এর মাঝে তারা ৩ সন্তানের বাবা-মা হয়। তাজকেরার স্বামী সাইবুর কামলা খেটে যা রোজগার করে নিজ সংসারে পারিবারিক খরচ তেমন না করে বরং তার উপার্জিত সকল টাকা বাবা ও ভাইদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে তাদের দিয়ে দেয়। এনিয়ে অভাবী সংসারে ঝগড়া-ঝাঁটি লেগেই থাকে। জীবন-জীবিকার চাহিদা মিটাতে স্ত্রী তাজকেরা আয়ের পথ বেছে নেয়, সে বাড়ীতে গাভীপালন, হাঁসমুরগী পালন ও সেলাই মেশিনের কাজ করে সংসার নির্বাহ করে। কিন্তু চরিত্রহীন স্বামী সাইবুরের নির্যাতন থেকে কর্মঠ গৃহিনী তাজকেরা রেহাই পায়নি। হরহামেশা মারপিট ও ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখতো।ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও ভরণপোষণ ঠিকমত দিতো না পিতা সাইবুর রহমান। সাইবুরের মেয়ে সালমা, কমেলা ও আব্দুস সামাদ(৭) পিতার নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সকলেই।চরিত্রহীন পিতার অত্যাচার ও নিরাপত্তাহীনতা বিবেচনায় মা তাজকেরা অপরিপক্ক বয়সে মেয়ে দু’জনের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়।গরু, হাঁসমুরগী পালন আর সেলাই মেশিনের কাজ করে তাজকেরা সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে।গরু বেঁচে ও জমানো টাকা দিয়ে মেয়ে-জামাইদের সুখের কথা ভেবে তাদের টাকা প্রদান করে তাজকেরা।এদিকে স্বামীর অত্যাচারের প্রেক্ষিতে তাজকেরার নামীয় অর্ধকাঠা বসতজমি স্বামীকে রেজিষ্ট্রি দেয় ও স্ত্রী তাজকেরার মা আলেমা বেগম পৌনে এককাঠা বাস্তভিটার জমি মেয়ে তাজকেরার সুখের কথা ভেবে জামাই সাইবুরকে কিনে দেয়।তারপরেও সাইবুর স্ত্রী তাজকেরাকে শারীরিক নির্যাতনআর ষ্টিমরোলার চালিয়ে যেতো।

গত ২৩ জুন দুপুরে অত্যাচারী স্বামী সাইবুর যখন কামলা খেটে বাড়ী আসে, ঐ সময়ে তাজকেরা চূলায় রান্না করছিলো এবং ডাল হাঁড়িতে সিদ্ধ হচ্ছিল।এ সময়ে স্বামী সাইবুর ছোট মেয়ে কমেলার সাথে কৃষিকার্ড নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে বাবা মেয়েকে অকথ্য ভাষা যা মুখে আনা যায় না ব্যবহার করলে স্ত্রী বাধা দিলে স্ত্রীর উপর চলে ষ্টিমরোলার। তাজকেরাকে মারপিটের এক পর্যায়ে পাষণ্ড স্বামী স্ত্রীর গলা চিপে ধরে এবং হাতে কামড় দেয়। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে স্বামী সাইবুর ’বটি’ নিয়ে স্ত্রী ও মেয়ের উপর চড়াও হলে নিজের ও মেয়ের জীবন বাঁচাতে তাজকেরা ডালের হাঁড়ি ফেলে দিলে গরম ডাল ছিটকে স্বামীর গায়ে পড়ে যায় এবং মা ও মেয়ে প্রাণে রক্ষা পায়।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাজকেরার স্বামী সাইবুরের ভাই অহেদুর, মনিরুল ও পিতা আব্দুস সাত্তারসহ আত্মীয়রা অমানবিক পন্থায় তাজকেরা, তার মেয়ে সালমা, কমেলাসহ ৬ জনের নামে ভোলাহাট থানায় মামলাকরে।আহত তাজকেরা ভোলাহাট স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা গ্রহণ করে। একইস্থানে স্বামী সাইবুরও চিকিৎসা করে।কিন্তু সমাজের চোখে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে ভোলাহাট থানা জুলমবাজ স্বামী সাইবুরের বড়ভাই অহেদুরের মামলা গ্রহণ করলেও নির্যাতিত নারী তাজকেরার মামলা থানা নেয়নি।নির্যাতনকারী পক্ষের দায়ের করা মামলায় অসহায় তাজকেরার দু’মেয়েসহ হাজতবাস হয়।জামিনে এসে তাজকেরা দেখে তার বাড়ীঘরের মালামাল সবকিছুই লুটপাট করে নিয়ে বাদীপক্ষ তাজকেরার ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কুলহীন নারী তাজকেরা উপায়ন্তর না পেয়ে মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে।

কান্না জড়িতকণ্ঠে ভাঙ্গাস্বরে তাজকেরার ছোট মেয়ে কমেলা জানায়, বাবা সাইবুর আমার মায়ের সাথে সবসময় অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করতো।বাবার কাছে কোনসময় আদর, স্নেহমমতা পাইনি।বেশীরভাগ সময় নানান খারাপ ভাষায় গালমন্দ করতো।বাবার কাছে লেখাপড়ার স্কুলের শেসন-ফি, বইপত্র-গাইড কেনার জন্য টাকা চাইলে, ভাল একটা পোষাকের দাবী করলে টাকা নেই বলে মারধর করতো।সে আরো জানায়, আমার স্কুলের উপবৃত্তির টাকা আমাকে বা আমার মায়ের হাতে দিতো না।সম্পূর্ণ টাকা বাবা তার কাছেই রেখে দিতো।আমার উপবৃত্তির টাকা দিয়েই দশমশ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি।বাবা কোন সময়ই আমাদের লেখাপড়া আমার ভাইবোন কারই প্রতি ভ্রুক্ষেপ ছিলো না।বাবা আমাদের জন্মই দিয়েছে, বাবার দায়দায়িত্ব পালন করেননি বলেই আর কথা বলতে পারেনি কমেলা।কমেলার এ মায়াকান্নার দৃশ্য দেখে প্রতিবেদকেরও চোখে পানি চলে আসে।

তাজকেরা বেগম তারও ভাঙ্গা কান্নায় বলেন, আমি স্যার সংসারের ছেলেমেয়েদের দু’বেলা দু’মুঠো আহার যোগাড় করতে পুরুষের মত মাঠে-ঘাটেও কাজ করেছি।তবুও ভাল আমার সন্তানেরা সুখে থাক শান্তিতে থাক।ভাঙ্গা কান্নায় তাজকেরা বলে, সংসার করতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনার মধ্যে একটু-আধটু ঝগড়া হয়তো হয় স্যার, আমাকে এমনভাবে লাঠি দিয়ে মারধর করে যা আপনাদের সামনে ভাষায় বলতে পারবো না।আমি বাড়ীতে এসে দেখি আমার বাড়ীতে থাকা গরু বিক্রি করা ২লাখ ৬০হাজার নগদ টাকা, ৩ ভরি সোনা, ৩টি বাইসাইকেল, ৩টি গরু, ৭টি ছাগল, ঘরে থাকা ৪ মন আলু, ২ মন সরিষাসহ সংসারের যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিছুই নেই।এমনকি আমি বাড়ীতে এসে দেখি ঘরে দরজায় তালা মারা রয়েছে।আমি এখন আমার বেটি-জামাইয়ের বাড়ীতে বসবাস করছি।আমার এহেন অবস্থার জন্য আপনাদের মাধ্যমে সরকার বাহাদুরের কাছে ন্যায্য বিচারের জোর দাবী করছি স্যার!

মাত্র ৭ বছরের শিশু আব্দুস সামাদকে তার বাবা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ভাঙ্গা কান্নায় বলে, হামার জ্ঞান পাই তখন পোষাক লিতে যাই, (হাতের ইশারাই দেখিয়ে) এভাবে হামাকে কিল মাড়ে। পেটে ও ঘাড়ে মারে! বলেই ভাঙ্গা কান্নায় ছোট্ট এ আব্দুস সামাদের আর কোন কথা বুঝা যায়নি।

এই অসহায় নারীর ঘটনাটি ভোলাহাটের আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন দেশের আইনের শাসন কি মুখ থুবড়ে পড়েছে? অসহায় তাজকেরার দু’মেয়েসহ ৭ বছরের ছোট্ট ছেলে আব্দুস সামাদ কি পাবে না আইনী সাপোর্ট আর ন্যায় বিচার?

ছবিক্যাপশনঃ ভোলাহাটে স্বামীর অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে বেটি-জামাইয়ের বাড়ীতে বসবাসরত তাজকেরা ও তার দু’মেয়ে সালমা, কমেলা ও ছোট ছেলে আব্দুস সামাদের কান্না জড়িতকণ্ঠের দৃশ্য। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় স্বামীর বাড়ীতে ঘরের তালা দেয়া ঘরের দৃশ্য।

এম.এস.আই শরীফ-০১৭১৩৭৪৮৫৭৭, ০১৭১৬৫৪৫৮৬৯
ভোলাহাট (চাঁপাাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি,
১৭.০৮.২০২৫ ইং

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102